গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলীয় দায়ের আল-বালাহ শহরে থাকেন ২৮ বছরের আমানি আল হুর। গত ২৭ অক্টোবর সেখানে ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে মা-বাবা, ভাইবোনসহ ৪০ স্বজন হারান তিনি। এখন শুধু বিলাপটাই তাঁর অবশিষ্ট আছে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তাদের সঙ্গে কেন আমার মৃত্যু হলো না?’ ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপ গাজায় প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি।
মৃতদের গণজানাজা পড়িয়ে গণকবরে শায়িত করা হচ্ছে। আমানি আল হুর জানান, ওই দিন নুসেরাত শরণার্থী শিবিরে একই ছাদের নিচে অবস্থান করছিল আটটি পরিবার। তিন প্রজন্মের মানুষ ছিলেন সেখানে। তাঁর মা-বাবা ও ভাইবোন, তাদের সন্তান ও অন্য আত্মীয়রা ছিলেন। তারা গাজা সিটি থেকে এই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এদিকে রাত ৮টার দিকে ইসরায়েল ওই বাড়িতে হামলা চালায়। আমানি বলেন, ‘আমি দেখলাম দেয়াল ও ছাদ আমাদের ওপর পড়ে যাচ্ছে। আমি ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ শুনতে পাইনি। মনে হলো কবরের ভেতরে প্রবেশ করেছি। অন্ধকারের মধ্যে কোনোমতে আমার চার শিশুসন্তানকে আগলে বের হয়ে আসি।’
ফিলিস্তিনি এ নারী বলেন, ‘ভবনটি ছিল লোকজনে পূর্ণ। শিশুরা অনেক হইচই করত। তাদের অধিকাংশই এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে!’ আফসোসের সুরে তিনি বলেন, ‘যদি আবার বাবাকে দেখতে পারতাম! ওই রাতে আমি কেবল তাঁর পেছনের দিকটা দেখতে পাচ্ছিলাম। যখন আমি বের হয়ে আসছিলাম, তিনি আমার ভাইবোনদের কিছু একটা বলছিলেন। আমার মায়ের শরীর কয়েক টুকরো হয়ে গেছে।’
এদিকে গাজায় গোরস্তানে এখন কবর দেওয়ার জন্য কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই। বিদ্যুৎ, পরিষ্কার পানি ও জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের জোগানও নেই। এতে কমপক্ষে ১৫টি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।